সিক্সের হাফ-ইয়ার্লি। সত্যবাবুর অঙ্ক
প্রশ্নে জুটল ৫৩। ক্লাসে হায়েস্ট, তাতে কী?
অঙ্কে ৫৩ আর
ফেল করায় কোনও পার্থক্য নেই!সুতরাং, চুলের মুঠি ধরেই সন্ধেবেলা মা নিয়ে গেলেন শ্রী
ধ্রুবপদ সেন-এর বাড়ি।
অঙ্কের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মাস্টারমশাই। 'বাঁদর ছেলে, থাপড়ে দাঁত ফেলে দেব' বলেন যখন, দাঁত নিজেই খুলে যায়, ভয়ে! মাস্টারমশাই-সুলভ একটা রাগী কালো চশমা। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ উঠে বাড়ির সামনে বাগানে, হাতে খুরপি, কোদাল। অনেকগুলো ছোট ছোট ফুল, একটা বড় পেয়ারা গাছ। খুব মিষ্টি পেয়ারা। সাহসে গব্বর সিং না হলে সে-পেয়ারা চুরির স্বপ্ন না-দেখাই ভাল। কিন্তু, যে কোনও পাড়াগাঁয়ের স্কুলে তেমন ডানপিটে এক-দু'পিস থাকত। আমাদের যেমন চাঁদুদা। কী করে বা কখন চুরি করত, কেউ জানে না। আর, ধরা পড়লেই বা কী? গোলকীপার চাঁদুদার পিঠে সব সয়! ওর সাহসিকতার পুরস্কার পেতাম আমরা। ধ্রুববাবুর গাছের পেয়ারা!
তাঁর 'গোয়ালে' অঙ্কের গরুদের কী করে পিটিয়ে 'মানুষ' করা হত, রোমহর্ষক সে সব গল্প সুলভ বীরপাড়ার অলিগলিতে। ধ্রুবস্যর আর আতঙ্ক সমার্থক। ছেলে দামাল? 'স্যর, একটু শাসন করে দেবেন' আর্জি নিয়ে বাবারা হাজির। ততটা দুষ্টু না-হলেও, অঙ্কে ৫৩-র আর যে কোনও দাওয়াই জানা ছিল না মায়ের। সুতরাং, সভয় প্রবেশ, সেই ঘরে। ৫৩-পাওয়া ছেলের মায়ের কুণ্ঠা, উষ্মাও। শুনলেন কারণ। ডাকলেন পাশে। পিঠে সস্নেহ হাত। 'অঙ্ক করতে ভয় পাস? দূর বোকা, অঙ্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সোজা সাবজেক্ট। করলেই পারবি। কাল সকাল সাড়ে ছটায় চলে আসবি।'
কেমন যেন ভরসা। যা শুনেছি, যতটা, মনে হল না তো! নাড়া-বাঁধা পরের সকালে। টেবিলের কোণে এন সি নস্য-র বিরাট কৌটো, সযত্ন-মলাট অনেক টেস্ট পেপারের পাশে। আর, শোনা গেল, ছেলে পাপুন আর মেয়ে মান্তুদি, বাবাকে ডাকছে 'ছেলে' বলে – উলটপুরাণ!
পাটিগণিত আর জ্যামিতি - দুই জটিল ধাঁধা তাঁর নস্যি! সেভেনে উঠে জানা গেল, বীজগণিত বিলকুল না-পসন্দ। কেন, জানতে চাইতেই হত। অকাট্য যুক্তি এল, ‘এ-স্কোয়ার মাইনাস বি-স্কোয়ার’ মনে রাখতে সদ্য-হিমশিম ছাত্তরের কাছে, 'বীজগণিত হল রেলগাড়ি। স্টেশনে গিয়ে দেখবি, দূরে একটা সিগনাল-পোস্ট। লাল আর সবুজ, দুটো আলো। সবুজ আলো মানে, ট্রেন যাবে, লাল মানে যেতে পারবে না। বীজগণিতে ফর্মুলা হল ওই সবুজ আলো। জ্বললে অংক হবে, ব্যাস। ভাবনার কোনও জায়গাই নেই! পাটিগণিত হল মোটরগাড়ি চালানো। কোথায় ভাঙা, কোথায় গর্ত, খানাখন্দ, লোক-বাচ্চা - দেখেশুনে খুঁজে নিতে হবে রাস্তা।' এতবার শুনেছি তারপর, অজান্তেই মনে 'কন্ট্রোল+এস'!
‘যেহেতু’ দিয়ে শুরু পাটিগণিত লেখা। পরের লাইনে দ্বিতীয় শর্তটি, ‘এবং’ দিয়ে। তৃতীয় লাইনে সিদ্ধান্ত, ‘সুতরাং’। অনেকে পছন্দ করতেন না, এত লেখা। ‘ইতিহাস নাকি’, বলতেও শুনেছি। স্যর কিন্তু অটল। ‘খাতায় অঙ্কটা দেখতে গিয়ে যেন প্রশ্নের দিকে তাকাতে না হয় পরীক্ষককে, সেভাবেই লিখতে হবে।’ অকাট্য! ঠিক যেমন রাসায়নিক পরিবর্তন আর ভৌত পরিবর্তনের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে নিজের টাকে হাত বোলাতেন আর বলতেন, ‘এটা রাসায়নিক, আর তোরা যখন কৈলাসের দোকানে মাঝেমাঝে মাথা ন্যাড়া করিস, ওটা ভৌত পরিবর্তন। ওই ন্যাড়া মাথায় আবার চুল গজাবে, পরিবর্তনটা অস্থায়ী। আমার টাকে আর চুল গজাবে না, স্থায়ী। ধর্মটা এখানে আমূল পরিবর্তিত।’ এতটাই সহজ!
ক্লাস এইটে একবার প্রাপ্তির খাতা উপচে পড়েছিল। নিজে যেহেতু অ্যানুয়াল পরীক্ষার প্রশ্ন করেছিলেন, খাতা দেখবেন না, অন প্রিন্সিপাল। সেই সময় বোধহয় অঙ্কের অন্য মাস্টারমশাইরা কেউ ছিলেন না। ফলে, পাশের শিশুবাড়ি স্কুলে গিয়েছিল আমাদের অঙ্ক খাতা। দেখেছিল রঘুদা, আমাদের লিট্টুর দাদা। পেয়েছিলাম, বোধহয়, ৯৭। রেজাল্ট বেরনোর পর প্রণাম করতে গিয়েছি, হাসিহাসি মুখে বললেন, ‘তোর আগেই জানি। রঘু এসেছিল। জানতে চাইল, স্যর কাশীনাথ কি আপনার ছাত্র? বললাম, হ্যাঁ, কিন্তু কেন? বলে, অঙ্কগুলো এমন করে লেখা, আপনার লেখা মনে হল, তাই কনফার্ম করতে এলাম।’ আনন্দ হয়েছিল আমারও, খুব!
কত ইতিহাস-ভূগোল, পরে। স্মৃতির পরতে পরতে। বুবাই (দীপাঞ্জন রায়) বসত স্যরের ডানদিকে, আমি বাঁদিকে। বুবাইয়ের খাতায় ভুল, ডানহাতে তো পেন, বাঁহাত উঠে গেল আমার কানে ‘শূয়ার, এটা কী করছস?’ যতক্ষণে আমি বলছি যে স্যর খাতাটা তো বুবাইয়ের ততক্ষণে আমার কান লাল করে ফেলেছেন! আমার আর বুবাইয়ের এ নিয়ে চলত বেশ। কিছুতেই বাঁদিকে বসবে না, ‘তোর ভুলের জন্য আমাকে কানমলা খেতে হবে তখন’, যুক্তি দিয়ে। ঠিক আগে পৌঁছে যেত। সে জন্যও কি কম গালাগালি করেছি বুবাইকে? ফেরার সময় অবশ্য জুবিলি মাঠে একসঙ্গে কত আড্ডা তারপর!
ম্যাথেমেটিক্স অনার্স নিয়ে স্কটিশচার্চ কলেজ। পার্ট ওয়ান-এর রেজাল্ট বেরল। চার পেপারে যথাক্রমে ১০, ২০, ২৫, ২৬, মোট ৮১ নিয়ে, আর এক বন্ধু সুমিত অধিকারীর কথামতো ‘সদ্য-বিধবা’ হয়ে কলকাতা থেকে বীরপাড়া ফিরলাম। সবাই-ই জেনে গিয়েছিলেন, অধঃপাতে গিয়েছে ছেলে, কলকাতায় গিয়ে পাখা গজিয়েছে। স্যরের কাছে গেলাম। সব শুনলেন। স্মিত হেসে প্রশ্ন, ‘এক পেপারে এর চেয়ে কম পেয়েছিলি কখনও?’ মনে পড়ল সেই ক্লাস সিক্স, সত্যবাবুর অঙ্ক প্রশ্ন, ৫৩ এবং ডিপিএস-এর ছাত্র হওয়ার দিনটা। একগাল হাসি। কেটে গেল আমার বৈধব্য দশা!
গতবার পুজোয় নবমীর দিন বীরপাড়া পৌঁছলাম। সেই দিন বিকেলে এথেলবাড়ি আশ্রমে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা। আমার সঙ্গে তখনও দেখা হয়নি, বিজয়া করতে পরে যাব, জানি। মেয়েকে আদর করে আর বাবার ওপর কপট রাগে বললেন, ‘কাশীনাথরে কইস, ধ্রুবস্যর এখনও বেঁচে আছে।’ আমি গেলাম পরদিন। একরাশ অভিমান, ‘আসিস না কেন?’ যখন জানালাম, গত দুবছর মেয়ের পরীক্ষার জন্য পুজোয় বীরপাড়া আসতে পারিনি, আবার সব গলে জল। গল্প, অনেক। আশি পেরিয়েও আশ্চর্য সুঠাম, ঋজু, নীরোগ। ‘দেশ’গুলো এখনও বাঁধানো। টেস্ট পেপারগুলো এখন তত দরকারি নয়, আর যে সেভাবে পড়ান না। কিন্তু, পুরনো ছাত্ররা গেলে এখনও প্রগলভ। খোঁজ নেন কে কোথায়, কী করছে, মনে আছে সব।
অঙ্কের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মাস্টারমশাই। 'বাঁদর ছেলে, থাপড়ে দাঁত ফেলে দেব' বলেন যখন, দাঁত নিজেই খুলে যায়, ভয়ে! মাস্টারমশাই-সুলভ একটা রাগী কালো চশমা। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ উঠে বাড়ির সামনে বাগানে, হাতে খুরপি, কোদাল। অনেকগুলো ছোট ছোট ফুল, একটা বড় পেয়ারা গাছ। খুব মিষ্টি পেয়ারা। সাহসে গব্বর সিং না হলে সে-পেয়ারা চুরির স্বপ্ন না-দেখাই ভাল। কিন্তু, যে কোনও পাড়াগাঁয়ের স্কুলে তেমন ডানপিটে এক-দু'পিস থাকত। আমাদের যেমন চাঁদুদা। কী করে বা কখন চুরি করত, কেউ জানে না। আর, ধরা পড়লেই বা কী? গোলকীপার চাঁদুদার পিঠে সব সয়! ওর সাহসিকতার পুরস্কার পেতাম আমরা। ধ্রুববাবুর গাছের পেয়ারা!
তাঁর 'গোয়ালে' অঙ্কের গরুদের কী করে পিটিয়ে 'মানুষ' করা হত, রোমহর্ষক সে সব গল্প সুলভ বীরপাড়ার অলিগলিতে। ধ্রুবস্যর আর আতঙ্ক সমার্থক। ছেলে দামাল? 'স্যর, একটু শাসন করে দেবেন' আর্জি নিয়ে বাবারা হাজির। ততটা দুষ্টু না-হলেও, অঙ্কে ৫৩-র আর যে কোনও দাওয়াই জানা ছিল না মায়ের। সুতরাং, সভয় প্রবেশ, সেই ঘরে। ৫৩-পাওয়া ছেলের মায়ের কুণ্ঠা, উষ্মাও। শুনলেন কারণ। ডাকলেন পাশে। পিঠে সস্নেহ হাত। 'অঙ্ক করতে ভয় পাস? দূর বোকা, অঙ্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সোজা সাবজেক্ট। করলেই পারবি। কাল সকাল সাড়ে ছটায় চলে আসবি।'
কেমন যেন ভরসা। যা শুনেছি, যতটা, মনে হল না তো! নাড়া-বাঁধা পরের সকালে। টেবিলের কোণে এন সি নস্য-র বিরাট কৌটো, সযত্ন-মলাট অনেক টেস্ট পেপারের পাশে। আর, শোনা গেল, ছেলে পাপুন আর মেয়ে মান্তুদি, বাবাকে ডাকছে 'ছেলে' বলে – উলটপুরাণ!
পাটিগণিত আর জ্যামিতি - দুই জটিল ধাঁধা তাঁর নস্যি! সেভেনে উঠে জানা গেল, বীজগণিত বিলকুল না-পসন্দ। কেন, জানতে চাইতেই হত। অকাট্য যুক্তি এল, ‘এ-স্কোয়ার মাইনাস বি-স্কোয়ার’ মনে রাখতে সদ্য-হিমশিম ছাত্তরের কাছে, 'বীজগণিত হল রেলগাড়ি। স্টেশনে গিয়ে দেখবি, দূরে একটা সিগনাল-পোস্ট। লাল আর সবুজ, দুটো আলো। সবুজ আলো মানে, ট্রেন যাবে, লাল মানে যেতে পারবে না। বীজগণিতে ফর্মুলা হল ওই সবুজ আলো। জ্বললে অংক হবে, ব্যাস। ভাবনার কোনও জায়গাই নেই! পাটিগণিত হল মোটরগাড়ি চালানো। কোথায় ভাঙা, কোথায় গর্ত, খানাখন্দ, লোক-বাচ্চা - দেখেশুনে খুঁজে নিতে হবে রাস্তা।' এতবার শুনেছি তারপর, অজান্তেই মনে 'কন্ট্রোল+এস'!
‘যেহেতু’ দিয়ে শুরু পাটিগণিত লেখা। পরের লাইনে দ্বিতীয় শর্তটি, ‘এবং’ দিয়ে। তৃতীয় লাইনে সিদ্ধান্ত, ‘সুতরাং’। অনেকে পছন্দ করতেন না, এত লেখা। ‘ইতিহাস নাকি’, বলতেও শুনেছি। স্যর কিন্তু অটল। ‘খাতায় অঙ্কটা দেখতে গিয়ে যেন প্রশ্নের দিকে তাকাতে না হয় পরীক্ষককে, সেভাবেই লিখতে হবে।’ অকাট্য! ঠিক যেমন রাসায়নিক পরিবর্তন আর ভৌত পরিবর্তনের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে নিজের টাকে হাত বোলাতেন আর বলতেন, ‘এটা রাসায়নিক, আর তোরা যখন কৈলাসের দোকানে মাঝেমাঝে মাথা ন্যাড়া করিস, ওটা ভৌত পরিবর্তন। ওই ন্যাড়া মাথায় আবার চুল গজাবে, পরিবর্তনটা অস্থায়ী। আমার টাকে আর চুল গজাবে না, স্থায়ী। ধর্মটা এখানে আমূল পরিবর্তিত।’ এতটাই সহজ!
ক্লাস এইটে একবার প্রাপ্তির খাতা উপচে পড়েছিল। নিজে যেহেতু অ্যানুয়াল পরীক্ষার প্রশ্ন করেছিলেন, খাতা দেখবেন না, অন প্রিন্সিপাল। সেই সময় বোধহয় অঙ্কের অন্য মাস্টারমশাইরা কেউ ছিলেন না। ফলে, পাশের শিশুবাড়ি স্কুলে গিয়েছিল আমাদের অঙ্ক খাতা। দেখেছিল রঘুদা, আমাদের লিট্টুর দাদা। পেয়েছিলাম, বোধহয়, ৯৭। রেজাল্ট বেরনোর পর প্রণাম করতে গিয়েছি, হাসিহাসি মুখে বললেন, ‘তোর আগেই জানি। রঘু এসেছিল। জানতে চাইল, স্যর কাশীনাথ কি আপনার ছাত্র? বললাম, হ্যাঁ, কিন্তু কেন? বলে, অঙ্কগুলো এমন করে লেখা, আপনার লেখা মনে হল, তাই কনফার্ম করতে এলাম।’ আনন্দ হয়েছিল আমারও, খুব!
কত ইতিহাস-ভূগোল, পরে। স্মৃতির পরতে পরতে। বুবাই (দীপাঞ্জন রায়) বসত স্যরের ডানদিকে, আমি বাঁদিকে। বুবাইয়ের খাতায় ভুল, ডানহাতে তো পেন, বাঁহাত উঠে গেল আমার কানে ‘শূয়ার, এটা কী করছস?’ যতক্ষণে আমি বলছি যে স্যর খাতাটা তো বুবাইয়ের ততক্ষণে আমার কান লাল করে ফেলেছেন! আমার আর বুবাইয়ের এ নিয়ে চলত বেশ। কিছুতেই বাঁদিকে বসবে না, ‘তোর ভুলের জন্য আমাকে কানমলা খেতে হবে তখন’, যুক্তি দিয়ে। ঠিক আগে পৌঁছে যেত। সে জন্যও কি কম গালাগালি করেছি বুবাইকে? ফেরার সময় অবশ্য জুবিলি মাঠে একসঙ্গে কত আড্ডা তারপর!
ম্যাথেমেটিক্স অনার্স নিয়ে স্কটিশচার্চ কলেজ। পার্ট ওয়ান-এর রেজাল্ট বেরল। চার পেপারে যথাক্রমে ১০, ২০, ২৫, ২৬, মোট ৮১ নিয়ে, আর এক বন্ধু সুমিত অধিকারীর কথামতো ‘সদ্য-বিধবা’ হয়ে কলকাতা থেকে বীরপাড়া ফিরলাম। সবাই-ই জেনে গিয়েছিলেন, অধঃপাতে গিয়েছে ছেলে, কলকাতায় গিয়ে পাখা গজিয়েছে। স্যরের কাছে গেলাম। সব শুনলেন। স্মিত হেসে প্রশ্ন, ‘এক পেপারে এর চেয়ে কম পেয়েছিলি কখনও?’ মনে পড়ল সেই ক্লাস সিক্স, সত্যবাবুর অঙ্ক প্রশ্ন, ৫৩ এবং ডিপিএস-এর ছাত্র হওয়ার দিনটা। একগাল হাসি। কেটে গেল আমার বৈধব্য দশা!
গতবার পুজোয় নবমীর দিন বীরপাড়া পৌঁছলাম। সেই দিন বিকেলে এথেলবাড়ি আশ্রমে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা। আমার সঙ্গে তখনও দেখা হয়নি, বিজয়া করতে পরে যাব, জানি। মেয়েকে আদর করে আর বাবার ওপর কপট রাগে বললেন, ‘কাশীনাথরে কইস, ধ্রুবস্যর এখনও বেঁচে আছে।’ আমি গেলাম পরদিন। একরাশ অভিমান, ‘আসিস না কেন?’ যখন জানালাম, গত দুবছর মেয়ের পরীক্ষার জন্য পুজোয় বীরপাড়া আসতে পারিনি, আবার সব গলে জল। গল্প, অনেক। আশি পেরিয়েও আশ্চর্য সুঠাম, ঋজু, নীরোগ। ‘দেশ’গুলো এখনও বাঁধানো। টেস্ট পেপারগুলো এখন তত দরকারি নয়, আর যে সেভাবে পড়ান না। কিন্তু, পুরনো ছাত্ররা গেলে এখনও প্রগলভ। খোঁজ নেন কে কোথায়, কী করছে, মনে আছে সব।
আমাদেরও মনে
আছে স্যর,
সবই। এই বয়সে
যখন বকুনি দেওয়ার লোকের সংখ্যা সত্যিই কম, আপনাদের মতো কারও কারও কাছে গেলে সেই বকুনির
আভাস পাই,
সেই শাসন। চোখ
না রাঙিয়েও,
প্রণাম করার পর
বুকে টেনে ধরেও। খুব ভাল থাকুন স্যর, প্রণাম নেবেন। এবার পুজোয় যাওয়া হবে না বীরপাড়া।
পরের বার গিয়ে আবার দেখা হবে। আবারও একটু বকবেন স্যর। ওটাই যে প্রাপ্তি!
(সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫)
(সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫)