Wednesday, July 14, 2021

কাশীনাথ ভট্টাচার্য / সেন্ট পিটার্সবার্গের পাভলভ আকাদেমিতে এক সকালে...

একটি কুকুর। পিকলস নয়, লাইকাও নয়। শুধুই একটি কুকুর। শুধু একটি কুকুরও নয়। কুকুর জাতি। তাদের সম্মানে।

ছবির এই কুকুর আমাদের অতি পরিচিত। তবে, চিনিয়ে দিতে হয়। বললেই খেলা শেষ। তবু,বলা উচিত।

তার বেদিতে লেখা, সেই সব কুকুরের সম্মানে, বিজ্ঞানের গবেষণা-বেদিতে মানবজাতির উন্নতির স্বার্থে যাদের নিঃস্বার্থ বলিদান। সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি কুকুর, সেই গোল বেদির চারপাশে।
সবার ওপরে যে, কোনও নাম নেই। পরিচিতি ‘পাভলভ ডগ’। এবার চিনেছেন নিশ্চয়। ক্লাস নাইনের জীবন বিজ্ঞান বই, প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতো খটোমটো নাম। ঠিক রাত ন’টায় কুকুরকে খাবার দিতে এলে কুকুরের লালা ঝরতে শুরু করে ন’টার ঘন্টা পড়লেই ইত্যাদি যা আমাদের কুণ্ডু-দাশ-কুণ্ডুতে পড়ানো হয়েছিল। রাত ন’টা এখানে রূপক। সন্ধে সাতটা হোক বা দুপুর একটা, একই ব্যাপার। ইভান পাভলভের আবিষ্কার। শর্তসাপেক্ষ বা শর্ত ব্যতিরেকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া। একই লোক রোজ একই সময় এলে এবং সেই সময় ঘণ্টা বাজলে, একই কুকুরের মুখ দিয়ে লালা ঝরবে। কোনও দিন ঘণ্টা বাজল না হয়ত, বা লোক পাল্টে গেল, কিংবা খাবারের পাত্র ছাড়াই এল অন্য লোক। কোন্ কোন্ শর্ত কেমনভাবে প্রভাব ফেলবে – এমন সব গুরুগম্ভীর বিষয়। সব মাথার ওপর দিয়ে যায় বলেই তো জীবন বিজ্ঞানটা আমার আর হল না। অবশ্য কোনওটা যে হয়েছে, এমন দাবিও নেই!
কিন্তু দেখে ভাল লাগে, কুকুরের জন্যও বেদি নির্মিত এখানে, পাভলভ আকাদেমিতে। সেন্ট পিটার্সবার্গে সেমিফাইনাল দেখতে আসার পর ফুরসত খুঁজছিলাম। সেমিফাইনালের সকালে পেলাম সুযোগ। যেখানে ছিলাম, খুব বেশি দূর নয়। বিজ্ঞানীর গবেষণাগারও ‘আকাদেমি’, মনে রাখবেন প্লিজ! নতুন বিজ্ঞানী গড়ে তোলা হবে যেখানে।
উলিতসা আকাদেমিকা পাভলোভা নামক এই বিজ্ঞানী প্রস্তুতকারক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখেই বাধা। বড় গেট। ভেতরে দ্বাররক্ষী, হাতে ট্যাব নিয়ে বেরলেন দেখে ট্যারাচোখ আমার! রুশ ভাষায় পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন (!), আমরা বুঝলামও যে,তিনি স্বার্থপর দৈত্যের ভূমিকায়, আমাদের প্রবেশ নিষেধ সেই সুন্দর বাগানে। কাকুতি-মিনতি চলল। সেই সুদূর ভারত থেকে এসেছি, কুকুরের বেদি না দেখেই চলে যাব? টিকিট কাটতেও রাজি, কোথায় পাব? মন গলে না কিছুতেই। ইংরেজি এক্স অক্ষরের মতো দুহাত নড়ছে শুধু, ডানহাতে ধরা ট্যাবটা তখনও!
অগত্যা? বাঙালিসুলভ বাউন্ডারির চারপাশে ঘুরে বেড়ানো। যদি ফাঁক দিয়ে দেখা যায়। যা দেখা গেল তাতে ছবি হয় না। চেষ্টা করেও নয়, ক্যামেরা দুরন্ত হলে, ৫০ মিটার দূরের ছবি জুম করে তোলার মতো হলেও, নয়। গাছপালা এত, অযত্নলালিত না সযতনে এমন অযাচিত ভাবে গজিয়ে তোলার চেষ্টা, বিজ্ঞানীরা বলবেন। ব্যর্থ মনোরথ। গুটি গুটি পায়ে আবারও সেই গেটের সামনে। এত কাছে এসেও এভাবে ফিরে যাওয়া, মানতে না পেরে।
গটগটিয়ে বেরিয়ে এলেন এক তরুণ। প্রায় কান্নাকাটি করে ফেলি আর কী! আপনি একবার যদি, বুঝিয়ে-সুজিয়ে... তাঁর অস্বস্তি বাড়ছে ক্রমশ। পরিচয়পত্র দেখালেন, তিনি ছাত্তর। সদ্য পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়েছেন। ‘তা’লে আর কী, আপনার বন্ধুই তো আমরা, কথা দিচ্ছি, একটা ছবি তুলেই বেরিয়ে আসব, প্লিজ ...’ শুনতে শুনতেই গাল প্রায় লাল সে ছাত্তরের। এত বড় অন্যায়টা পাভলভের সঙ্গে, তাঁর আজন্মলালিত ‘ডিসিপ্লিন’-এর সঙ্গে, শুধু এক বিদেশির খাতিরে কি, দ্বিচারিতা... দ্বিধায় ...
তারপর যা হল, ছবিতে ...
এই চিত্রনাট্য যাঁর সাহায্য ছাড়া লেখাই হত না ... Prasanta Das 🙂

* ১৫ জুলাই ২০১৮

No comments:

Post a Comment