Saturday, July 17, 2021

কাশীনাথ ভট্টাচার্য / কচুরি নিয়ে জলকচুরি!

সব দোষ পলাশের। ব্যাটা মোহনবাগানি!

ক্যারাম খেলার প্রতি আমার দুর্বলতা সুবিদিত। আর পলাশটা রোজ শোনায়, সালকে-তে ওর পাড়ার ক্লাবে নিয়মিত ক্যারাম পেটানোর কথা। স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি সেরে সোজা ক্লাবে গিয়ে খেলে-টেলে বাড়ি ফেরে। রবিবার তো সারাদিনই, শনিবারও ছুটি থাকলে সকাল-বিকেল-সন্ধে। প্রচুর হিংসে আমার!
বললাম তাই, একটা রোববার সকাল-সকাল তোর বাড়ি যাব, সারাদিন ক্যারাম খেলে আর দুপুরে তোর বাড়ি মাংস-ভাত খেয়ে ফিরব। 'যে দিন বলবি, চলে আয়। খেতে তো আর পারবি না, এত গেম খাবি!'
হেব্বি রাগ হল, সত্যিই। ক্যারাম নিয়ে আমাকে কথা শোনানো! না হয় ৪-৫ বছর হাত দিইনি, না হয় নিয়মিত খেলা ছেড়েছি বছর কুড়ি, কিন্তু তাই বলে পলাশের বাতেলা শুনব? বলে কিনা, দশের কম কোনও বোর্ডে ও পেলেই নাকি গেম আমার। সাহস!
জেগে উঠল পৌরুষ, এই ছুঁই-ছুঁই পঞ্চাশে। সামনের রোববারই যাব, চল দেখি!
ব্যস, বাবু অমনি হোয়াটস্যাপ জগতের বাইরে! মঙ্গলবার এল আবার, দিন পাঁচ পর। মনে করাতে বলে ব্যাটা, 'তুই বলেছিলি নাকি? ঢপ, দেখিইনি।' বন্ধুরা গাল পাড়ল ওকে, গুছিয়ে। বুঝলাম, যা বোঝার!
বাগুইআটিতে অনন্য থাকে। কলেজে আমার বছর দুই জুনিয়র। খবর দিল, ওর বাড়িতে একটা ছোট বোর্ড আছে। হইহই, চল চল। ওর ছেলের পরীক্ষা চলছিল। সপ্তাহ তিন অপেক্ষা। অবশেষে এক সন্ধ্যায় ক্যারাম। বাপ্পা এল। পরে ওর মেয়ে-বউ। সোনালি, ছেলেকে নিয়ে। অনন্যর ছেলে এবং তার বন্ধু তো ছিলই। অনন্যর বউও দেখলাম ফাটিয়ে খেলে। একটা-একটা ঘুটি, নিখুঁত। আমার ছোটবেলায় মা-কেও খেলতে দেখেছিলাম, অবিকল ওভাবে। বললামও। সোনালি চমৎকার রান্না করে এনেছিল। গুছিয়ে ক্যারাম, গান, খাওয়া --- আহা!
ইউরোপে ক্লাব-মরসুম চলাকালীন আমার রাত-জাগা বেড়ে যায়। সকালে হাঁটা একবার বন্ধ হলেই হল, জানুয়ারির পর মাস তিনেক একদম হয় না। এবার আর শুরুই হচ্ছিল না। প্রস্তাব দিলাম বাপ্পা আর অনন্যকে, চল, হাঁটি। ওরা রাজি। সোমবারটা বাদ দিয়ে মঙ্গল থেকে, সকাল সোয়া ছ'টায় জোড়ামন্দির। দু'সপ্তাহ পর বাপ্পার মেয়ের স্কুল খুলল, আমরা ছ'টায় জোড়ামন্দির। মাস দুই হতে চলল, হইহই করে হাঁটছি। শুধু, সোমবার অফডে। সপ্তাহে ছ'দিন। মন-শরীর ফুরফুরে। সুগারের কাঁটা ১২২ পেরচ্ছে না!
দেবমিত্রা, মানে অনন্যর বউ, অবশ্য সেই দিনই সাবধান করেছিল, 'তোমার সঙ্গে দুটোই কিন্তু ফুডি। ভাল খাবারের সন্ধান পেলেই হাঁটা ছেড়ে দৌড়বে।' হলও তাই। আমার আবার কচুরির টান! চ', রোববার করে কচুরি-সংঘ। বলামাত্রই প্রস্তাব-পাস ধ্বনি-ভোটে!
আমরা এখন রোববার হাঁটার পালা শেষ করে, বাপ্পার গাড়িতে চেপে কচুরি সাঁটাতে বেরচ্ছি! এই রোববার গেলাম পুঁটিরাম, কলেজ স্ট্রিট। বাগুইআটি থেকে কলেজ স্ট্রিট গিয়ে কচুরি, লোকজন বলছে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি। আমাদের বয়েই গ্যালো!
বয়সে একশো পেরিয়ে-যাওয়া দোকানে সাতসকালে গরম কচুরি আর খোসাসহ আলুর তরকারি, সঙ্গে আবার গরম জিলিপিও, যা 'জলেবি' কখনও নয় --- আহা রে, অমৃত! এমন কচুরি-জিলিপির জন্য আরও ছ'দিন গড়ে চার কিলোমিটার করে হাঁটা তো তুচ্ছাতিতুচ্ছ!
সামনের রোববার আমহার্স্ট স্ট্রিটে গীতিকা না নাগেরবাজারে অভিরুচি? অনন্য-বাপ্পা ঠিক করছে, আমি আপাতত পোস্টাচ্ছি!
আর হ্যাঁ, পলাশ, থ্যাঙ্কু। তুই ওভাবে ক্যারাম খেলাটা বাইপাস না করলে আমি অনন্যকে খুঁজতাম না, একসন্ধে ক্যারাম খেলতে গিয়ে, আমাদের রোজকার হাঁটা আর রোববারের কচুরি-সংঘও পথ-চলা শুরু করত না।
আসলে, মোহনবাগান তো, বিপক্ষকে ভাল খেলতে চুংচুং-শসা- অমলেট বলে ফেলে বাড়তি উৎসাহটা দিয়েই ফেলে!
বিঃ দ্রঃ আমার সঙ্গী দুই হাঁটুরে, বাপ্পা আর অনন্যও, তীব্র মোহনবাগান!!


                                                                                                                            

















                                    ** ১৭ জুলাই ২০১৯

No comments:

Post a Comment